Hanuman Chalisa in Bengali

Hanuman Chalisa in Bengali | শ্রীহনুমান চালিশা

Hanuman Chalisa in Bengali: ঠিক বলি, ছোটবেলায় শুনতাম ঠাকুরদা খুব ভোরে উঠে একটা বই পড়েন। লাল-কালো পাতায় লেখা, সাদা অক্ষরে ছাপা। শব্দগুলো খুবই অদ্ভুত মনে হত—“জয় হনুমান জ্ঞান গুণ সাগর…”—মানে কিছু বুঝতাম না, শুধু ওঁর মুখের এক শান্তির ভাব দেখতাম।

পরে বুঝলাম, এটাই হচ্ছে শ্রীহনুমান চালিশা—একটা হিন্দু ভক্তিগীত যার মধ্যে আছে ৪০টি স্তব বা চরণ (এই জন্যই একে ‘চালিশা’ বলা হয়)। কবি তুলসীদাস রচনা করেছিলেন এটা, সম্ভবত ১৬শ শতকের দিকে। তবে মজার ব্যাপার কী জানো? এত শতাব্দী পেরিয়েও, এই চালিশা আজও লক্ষ লক্ষ মানুষের বিশ্বাসের মূল স্তম্ভ হয়ে আছে।

শ্রীহনুমান চালিশা (Hanuman Chalisa in Bengali)

॥ দোহা ॥

শ্রীগুরু চরণ সরোজ রজ, নিজ মন মুকুর সুধারি।
বরনউ রঘুবর বিমল যশ, যা দায়ক ফল চারি॥


🚩 হনুমান চালিশা (৪০ চৌপাই)

১. জয় হনুমান জ্ঞান গুণ সাগর।
জয় কপীশ তিহুঁ লোক উদাগর॥

২. রামদূত অতুলিত বল ধামা।
অঞ্জনিপুত্র পবনসুত নামা॥

৩. মহাবীর বিক্রম বজরঙী।
কুমতি নিবার সুমতি কেং সঙ্গী॥

৪. কঞ্চন বরণ বীরাজ সুবেসা।
কানন কুন্ডল কুঞ্চিত কেশা॥

৫. হাথ বজ্র অউর ধ্বজা বিরাজে।
কাঁধে মুঞ্জ জনেউ সাজে॥

৬. শঙ্কর সুভন কেশরীনন্দন।
তেজ প্রতাপ মহা জগ বন্দন॥

৭. বিদ্যাবান গুণী অতি চাতুর।
রাম কাজ করিবে কঁহাতুর॥

৮. প্রভু চরিত্র শুনিবে ক রসিয়া।
রাম লষণ সীতা মন বসিয়া॥

৯. ক্ষূক্ষ্ম রূপ ধরী সীয়হি দেখাবা।
বিকট রূপ ধরী লঙ্ক জ্বালাবা॥

১০. ভীম রূপ ধরী অসুর সংহারে।
রামচন্দ্র কে কাজ সওঁরে॥

১১. লায়ে সঞ্জীবন লষণ জিয়ায়ে।
শ্রীরঘুবীর হর্ষি উর লায়ে॥

১২. রঘুপতি কীন্হি বহুৎ বঢ়াই।
তুম মম প্রিয় ভরত সম ভাই॥

১৩. সহস বদন তুম্‌হরো যশ গায়ে।
অস কহি শ্রিপতি কণ্ঠ লাগায়ে॥

১৪. সনকাদিক ব্রহ্মাদিমুনীসা।
নারদ সারদ সহিত অহীসা॥

১৫. যম কুবের দিগপাল যেখানে।
কবি কোবিদ কহি সকে কোথা॥

১৬. তুম উপকার সুগ্রীবহি কীন্যা।
রাম মিলায়ে রাজপদ দীন্যা॥

১৭. তুম্‌হরো মন্ত্র বিভীষণ মানা।
লঙ্কেশ্বর ভাই সব জগ জানাঃ॥

১৮. যুগ সহস্র যোজ্ন পর ভানু।
লীল্যো তাহি মধুর ফল জানু॥

১৯. প্রভু মুদ্রিকা মেলি মুখ মায়ি।
জলধি লাঁঘি গয় চাচি নয়ি॥

২০. দুর্গম কাজ জগত কে জেতে।
সুগম অনুগ্রহ তুম্‌হর তেত॥

২১. রাম দুআরে তুম্‌ রাখবারে।
হোত না আজ্ঞা বিনু পসারে॥

২২. সব সুখ লহে তুম্‌হারী শরনা।
তুম রক্ষক কাহুঁ কো ডর না॥

২৩. আপন তেজ সম্মারো আপনি।
লোক হঁকারে কান হঁকারি॥

২৪. ভূত পিশাচ নিকট নাহি আবে।
মহাবীর যব নাম সুনাবে॥

২৫. নাসৈ রোগ হরৈ সব পীড়া।
জপত নিরন্তর হনুমত বীড়া॥

২৬. সংকট তেহন হনুমান ছুড়াবে।
মন ক্রম বচন ধ্যান জো লাবে॥

২৭. সব পর রাম তপস্বী রাজা।
তিনকে কাজ সকল তুম সাজা॥

২৮. অউর মনোরথ যো কোই লায়ে।
সোই অমিত জীবন ফল পায়॥

২৯. চারো যুগ পরতাপ তুম্‌হারা।
হৈ প্রসিদ্ধ জগত উজিয়ারা॥

৩০. সাধু সন্ত কে তুম্‌ রাখবারে।
অসুর নিকন্দন রাম দুলারে॥

৩১. অষ্টসিদ্ধি নবনিধি কে দাতা।
অস বর দীন জানকি মাতা॥

৩২. রাম রসায়ন তুম্‌হারী লীলা।
সদা রঘুপতি কে দাসা॥

৩৩. তুম্‌হর ভজন রাম কো পাবে।
জন্ম জন্ম কে দুখ বিসরাবে॥

৩৪. অন্তকাল রঘুবরপুর যায়ি।
যাঁহাঁ জনম হরিভক্ত কহাঁই॥

৩৫. অউর দেবতা চিত্ত না ধরই।
হনুমত সই সর্ব সুখ করই॥

৩৬. সংকট কাঁটৈ মিটাই সব পীরা।
যো সুমিরৈ হনুমত বলবীরা॥

৩৭. জয় জয় জয় হনুমান গোসাঁই।
কৃপা করহু গুরুদেব কি নাঁই॥

৩৮. যো শত বার পাঠ কর কই।
ছূটহি বন্ধি মহা সুখ হই॥

৩৯. যো ইহ পড়হান হনুমান চালিসা।
হোয় সিদ্ধি সকি গৌরিসা॥

৪০. তুলসীদাস সদা হরিচেরা।
কীজে নাথ হৃদয় মহ ডেরা॥


॥ দোহা ॥

পবনতনয় সংকট হরণ, মঙ্গল মূর্তি রূপ।
রাম লক্ষণ সীতা সহ, হৃদয় বসহু সুরভূপ॥

Hanuman Chalisa in Bengali | Meaning

॥ দোহা ॥

শ্রীগুরু চরণ সরোজ রজ, নিজ মন মুকুর সুধারি।
বরনউ রঘুবর বিমল যশ, যা দায়ক ফল চারি॥

অর্থ: শ্রীগুরুর পদপদ্মের ধূলি দিয়ে নিজের মনের দর্পণ পরিষ্কার করি। এরপর আমি রঘুবর শ্রী রামের পবিত্র যশ বর্ণনা করি, যা ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ প্রদান করে।


হনুমান চালিশা ও অর্থ

১. জয় হনুমান জ্ঞান গুণ সাগর।
জয় কপীশ তিহুঁ লোক উদাগর॥

অর্থ: জয় হনুমান, তুমি জ্ঞান ও গুণের সাগর। তিনটি লোকেই তুমি বিখ্যাত, কপিদের রাজা।


২. রামদূত অতুলিত বল ধামা।
অঞ্জনিপুত্র পবনসুত নামা॥

অর্থ: তুমি শ্রী রামের দূত, অপরিসীম শক্তির আধার। তোমার নাম অঞ্জনীর পুত্র ও পবন দেবের পুত্র।


৩. মহাবীর বিক্রম বজরঙী।
কুমতি নিবার সুমতি কেং সঙ্গী॥

অর্থ: তুমি মহাবীর, অসাধারণ বীরত্বের অধিকারী, বজ্রদেহী। তুমি মন্দবুদ্ধি দূর করে সদবুদ্ধি দান করো।


৪. কঞ্চন বরণ বীরাজ সুবেসা।
কানন কুন্ডল কুঞ্চিত কেশা॥

অর্থ: তোমার রঙ সোনার মতো, তুমি সুন্দর পোশাকে সজ্জিত। তোমার কানে কুন্ডল এবং চুল কোঁকড়ানো।


৫. হাথ বজ্র অউর ধ্বজা বিরাজে।
কাঁধে মুঞ্জ জনেউ সাজে॥

অর্থ: তোমার হাতে বজ্র ও পতাকা রয়েছে। কাঁধে ব্রাহ্মণীয় জনেউ (পবিত্র সুতো) আছে।


৬. শঙ্কর সুভন কেশরীনন্দন।
তেজ প্রতাপ মহা জগ বন্দন॥

অর্থ: তুমি শঙ্করের অংশ, কেশরীর পুত্র। তোমার তেজ ও গৌরব বিশ্বব্যাপী বন্দিত।


৭. বিদ্যাবান গুণী অতি চাতুর।
রাম কাজ করিবে কঁহাতুর॥

অর্থ: তুমি জ্ঞানী, গুণবান ও অতিশয় বুদ্ধিমান। তুমি সদা রামের সেবা করতে আগ্রহী।


৮. প্রভু চরিত্র শুনিবে ক রসিয়া।
রাম লষণ সীতা মন বসিয়া॥

অর্থ: তুমি রামের লীলা শুনতে ভালোবাসো। রাম, লক্ষ্মণ ও সীতার ভাবনায় তুমি নিমগ্ন থাকো।


৯. ক্ষূক্ষ্ম রূপ ধরী সীয়হি দেখাবা।
বিকট রূপ ধরী লঙ্ক জ্বালাবা॥

অর্থ: সীতার কাছে তুমি কোমল রূপে উপস্থিত হলে। আবার রাক্ষসদের ধ্বংস করতে ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছিলে।


১০. ভীম রূপ ধরী অসুর সংহারে।
রামচন্দ্র কে কাজ সওঁরে॥

অর্থ: রাক্ষসদের ধ্বংসে তুমি ভীষণ রূপ ধারণ করো এবং শ্রী রামের কাজ সফল করো।


১১. লায়ে সঞ্জীবন লষণ জিয়ায়ে।
শ্রীরঘুবীর হর্ষি উর লায়ে॥

অর্থ: তুমি সঞ্জীবনী বুটি এনে লক্ষ্মণকে জীবিত করেছিলে। এতে রাম অত্যন্ত খুশি হয়ে তোমাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন।


১২. রঘুপতি কীন্হি বহুৎ বঢ়াই।
তুম মম প্রিয় ভরত সম ভাই॥

অর্থ: রঘুনাথ তোমার অনেক প্রশংসা করলেন এবং বললেন—”তুমি আমার প্রিয় ভ্রাতা ভরতের মতই প্রিয়।”


১৩. সহস বদন তুম্‌হরো যশ গায়ে।
অস কহি শ্রিপতি কণ্ঠ লাগায়ে॥

অর্থ: সহস্র মুখে শ্রী বিষ্ণুও তোমার গুণগান করেন। এ কথা বলে তিনি তোমাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন।


১৪. সনকাদিক ব্রহ্মাদিমুনীসা।
নারদ সারদ সহিত অহীসা॥

অর্থ: সনক, ব্রহ্মা, নারদ, সারদা ও শেষ নাগও তোমার গুণগান করেন।


১৫. যম কুবের দিগপাল যেখানে।
কবি কোবিদ কহি সকে কোথা॥

অর্থ: যম, কুবের এবং আট দিকপালও তোমার মাহাত্ম্য জানেন। কোনও কবি তোমার প্রশংসা সম্পূর্ণরূপে করতে পারে না।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১. আমি কি সংস্কৃত বা হিন্দির পরিবর্তে বাংলায় হনুমান চালিশা পড়তে পারি?

হ্যাঁ, একেবারেই পারেন।
ভাষার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল আপনার ভক্তি। বাংলায় হনুমান চালিশা পড়লে আপনি অর্থ ভালোভাবে বুঝতে পারবেন এবং ভক্তিতে আরও গভীরভাবে সংযুক্ত হতে পারবেন। ভগবান হনুমান আপনার মনের কথা শোনেন, শুধু উচ্চারণ নয়।

২. প্রতিদিন না পড়ে শুধু মঙ্গলবার বা শনিবার পড়া কি ঠিক?

হ্যাঁ, এতে কোনও সমস্যা নেই।
ভারতের বহু ভক্ত মঙ্গলবার বা শনিবার দিন হনুমানজীর পবিত্র দিন বলে মনে করে ওইদিন হনুমান চালিশা পাঠ করেন। আপনি যদি সপ্তাহে একদিনও আন্তরিক ভক্তি নিয়ে পাঠ করেন, তাও মানসিক শান্তি, সাহস এবং সুরক্ষা লাভ করবেন।

৩. আমি কি আমার বাচ্চাকে বাংলায় হনুমান চালিশা শেখাতে পারি?

অবশ্যই এবং এটা দারুণ একটা উদ্যোগ হবে।
বাংলা ভাষায় হনুমান চালিশা শেখালে শিশুরা সহজে বুঝতে পারবে এবং নৈতিক শিক্ষা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ শেখা শুরু করবে—যেমন সাহস, সততা, ও নিষ্ঠা। আপনি bedtime story বা মৃদু সুরে জপ হিসেবে শেখাতে পারেন। এতে ওরা ইতিবাচক শক্তি নিয়ে বড় হবে।


উপসংহার

আমরা সবাই জীবনে কখনও না কখনও ভেঙে পড়ি, মাথা নিচু করে বসে থাকি… তখন কেউ সাহসের কথা বললেই কেমন যেন ভরসা লাগে, না?
আমার কাছে হনুমান চালিশা ঠিক সেইরকমই একটা জিনিস।

সব বুঝে শুনে বলছি—এটা শুধু পুরাণের গল্প নয়। এটা একটা অনুভব। একটা শক্তি, যেটা চুপচাপ পাশে দাঁড়িয়ে থাকে, যখন সবাই সরে যায়।

আমি নিজে বাংলায় পড়ে শুরু করেছিলাম। এক-একটা লাইন পড়ে মনে হত, “আরে, এ তো আমার কথাই বলছে!”
এই অনুভূতিটাই তো আসল, তাই না?

তুমি হিন্দিতে পড়ো, সংস্কৃত বোঝো বা না বোঝো, বাংলা যদি তোমার ভাষা হয়, তাহলে এখান থেকেই শুরু করো।
নিজের জন্য। মনের জন্য। একটু ভরসা খুঁজে পাওয়ার জন্য।

আর যদি কখনও কোনও লাইন তোমার মনে গেঁথে যায়—আমার মতো—তাহলে সেটা শেয়ার করো। বন্ধুদের সঙ্গে, বাড়ির ছোটদের সঙ্গে… কিংবা শুধু নিজের ডায়েরিতেই লিখে রাখো।